বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

বরিশালে ধুমধামে বুড়োবুড়ির বিয়ে!

বরিশালে ধুমধামে বুড়োবুড়ির বিয়ে!

বৃদ্ধ মানুষটার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে, বৃদ্ধার স্বামীর। উভয়েরই সন্তান রয়েছে তবে তারা কেউ বাবা-মাকে দেখে না।

একাকী জীবনে তাদের বড়ই কষ্ট, দেখভালের কেউ নেই। সেই একাকীত্ব ঘোচাতে এগিয়ে এলো কিছু তরুণ।

নিজেরা ৪০ হাজার টাকা চাঁদা তুলে দুই বুড়ো-বুড়ির বিয়ে দিয়ে তাদের করুণ মুখগুলো খুশিতে ভরিয়ে দিয়েছে তারা।

বরিশাল নগরীর খান সড়কে আজ শনিবার (১৩ মার্চ) ছিল কনেকে বরের ঘরে তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠান। সেখানে আনন্দ উল্লাসের কোনও কমতি ছিল না।

খানাপিনাও হয়েছে স্বাভাবিক বিয়ে বাড়ির মতোই। বিয়ে শেষে ঘোড়ার গাড়িতে কনেকে বরের বাড়ি পাঠানো হয়।

বর হচ্ছেন বজলু খান (৬৩)। তার বাবার নাম মৃত আমির আলী। বর্তমানে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। নগরীর দরগাহবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।

দুই বছর পূর্বে স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। ওই ঘরে থাকা এক ছেলে ও দুই মেয়ে তাদের বিয়ের পর বাবার দেখাশুনা করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে, কনে হচ্ছেন বকুল বেগম (৫৭)। তার বাবার নাম ইসমাইল আলী খান। ১০ বছর আগে তার স্বামী মারা যায়। ওই ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

বিয়ের পর তারাও মায়ের কোনও খোঁজখবর রাখেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে বকুল খান সড়ক এলাকায় বসবাস করার পাশাপাশি ডিম বিক্রি করেন।

এ বিয়ের উদ্যোক্তা নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান মুন্না, মিলন, মিলা ও ইমান আলী জানান, এই দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ছেয়েমেয়ে থেকেও না থাকার মতো।

তাদের দেখাশোনা করার কেউ নেই। তাদের একাকীত্ব দূর করা এবং অসুস্থ হয়ে পড়লে খবরাখবর রাখার সুবিার জন্যই এ বিয়ে।

এ জন্য বরের পক্ষ থেকে একজন ঘটক পাঠানো হয়। তিনি প্রথমে কনের সাথে কথা বলেন। এভাবে কিছুদিন চলার পর উভয়পক্ষ রাজি হয়।

কিন্তু বিয়ে করার মতো তাদের টাকা-পয়সা ছিল না। এমনকি মসজিদে বিয়ের পর জিলাপি খাওয়াবে সেই টাকাও ছিল না। বিষয়টি আমরা জানতে পেরে বর ও কনের সঙ্গে কথা বলি।

এরপর উভয়ের সম্মতিতে শুক্রবার খান সড়ক জামে মসজিদে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়েতে ৩০ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়।

বিয়ে পড়ান কাজী মো. আবুল। বিয়ের পর উপস্থিত সকলকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। এরপর আয়োজন চলে তাদেরকে ধুমধামে বিয়ে দেওয়ার। এ জন্য ৪০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়।

শনিবার দুপুরে ছিল কনে তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠান। সেখানে বরসহ ৬০ জনকে আপ্যায়িত করা হয়। খাবারের মধ্যে ছিল পোলাও, রোস্ট, ঝাল মাংস, ইলিশ মাছ এবং মিষ্টি ও দধি।

আপ্যায়ন শেষে বরকনেকে ঘোড়ার গাড়িতে করে খান সড়ক এলাকায় ঘোরানো হয়। এরপর কনেকে নিয়ে দরগাহ বাড়ির ভাড়া বাসায় চলে যান বর।

বর বজলু খান বলেন, আমি কাঠমিস্ত্রির কাজ করে যা পাই তা দিয়ে প্রতিদিনের সংসার চলে যায়। কিন্তু আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একা হয়ে পড়ি।

আমার ছেলে-মেয়ের বিয়ের পর তারা আর আমার খোঁজখবর রাখে না। বয়স হয়েছে, বেশিরভাগ সময় রোগে বিছানায় পড়ে থাকতে হয়।

কেউ যে রান্না করে খাওয়াবে সেই লোকও পাওয়া যায় না। এ কারণে এমন একজন মেয়ে খুঁজছিলাম যার অবস্থা আমার মতোই। তাহলে সে আমার অবস্থাটা বুঝতে পারবে।

তিনি বলেন, বকুল আর আমার একই অবস্থা। দুইজনকেই একাকী বাস করতে হয়। এ জন্য আমি ঘটক পাঠিয়ে তাকে প্রস্তাব দেই।

সে রাজি হলে খান সড়কের যুবকরা চাঁদা তুলে ধুমধাম করে আমাদের বিয়ে দেন। আমি এবং বকুল ভীষণ খুশি। এখন বাকি জীবনটা দুজন দুজনের একাকীত্ব ঘোচানোর সঙ্গে সঙ্গে বিপদ-আপদেও একজন অপরজনকে সাহায্য করতে পারবো।

শনিবার বিয়ের আয়োজনে এলাকাবাসীর মধ্যেও ছিল ব্যাপক উৎসাহ। তারাও বিয়ের আনন্দে যোগ দিয়ে যে যার মতো উপহার দিয়েছেন বর-কনেকে।

নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেদী পারভেজ খান আবীর বলেন, ওই বিয়েতে আমারও দাওয়াত ছিল। কিন্তু, ব্যস্ততার জন্য অংশগ্রহণ করতে পারিনি। তবে নব দম্পত্তিকে দোয়া করেছি। তারা যে আশা নিয়ে এ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তা যেন পরিপূর্ণ হয়।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech